কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। আরও মৃত্যুর খবর রয়েছে। তবে নিশ্চিত না হওয়ায় তা হিসাব করা হচ্ছে না।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসীন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেনে, ‘অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৬ হাজার। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৪০০ জন। পুড়ে গেছে ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গার ঘর। বিষয়টি তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বার বার অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে ত্রাণ সচিব বলেন, ‘সোমবারের অগ্নিকাণ্ডটি স্মরণকালের সর্ববৃহত। এ ঘটনার রহস্য বের করার পাশাপাশি আগেরগুলোও খতিয়ে দেখা হবে। মানবিক সহযোগিতা দিতে গিয়ে বার বার ঘটা এ ঘটনা যদি পরিকল্পিত হয় তবে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে, মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরের দিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
এদিকে, ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) যোগাযোগ ও গণসংযোগ কর্মকর্তা সাইয়্যেদ মো. তাফহীম মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, প্রাথমিক পরিসংখ্যানে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ৮-ই ও ডব্লিউ, ৯ এবং ১০ ক্যাম্পে সোমবারের অগ্নিকাণ্ডে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। আগুন থেকে রক্ষা পেতে গিয়ে আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ৬০০ জন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে নানা বয়সী প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা।কিন্তু বিকেলে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসীনের ব্রিফিংয়ের পর আইএসসিজির যোগাযোগ ও গণসংযোগ কর্মকর্তা সাইয়্যেদ মো. তাফহীম অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবটাই পরিগণিত করতে অনুরোধ জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আরেকটি বার্তা পাঠান।
আইএসসিজির ক্যাম্প ভিত্তিক কর্মকাণ্ড তদারকির জন্য তৈরি (১৮ জানুয়ারি) একটি ডাটাবেজের হিসাব অনুসারে জানা গেছে, বালুখালীর ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ৬ হাজার ২৫০ আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন, ৮-ডাব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ৬ হাজার ৬১৩টি আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন, ক্যাম্প ৯-এ বাড়ি ৭ হাজার ২০০টি আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন এবং ক্যাম্প ১০-এ বাড়ি ৬ হাজার ৩২০টি আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন। এ হিসাবে চার ক্যাম্পে বাড়ির সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ৩৮৩টি। আর এসব ক্যাম্পে জনসংখ্যা ছিল এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৭ জন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ্দোজা নয়ন জানান, ঘটনাস্থলে প্রশাসনের কয়েক স্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে ঘটনা তদারকি করছেন। প্রাথমিক হিসেবে ঘর পুড়ে বাস্তুচ্যুত হওয়া রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২২ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালীর ৮-ই ও ডব্লিউ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৯ ও ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও। সর্বশেষ রাত ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুড়ে যায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজারেও বেশি রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর। এছাড়া পুড়ে গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।